24bangladeshnews.com
ঢাকাশুক্রবার , ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন ও আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. রাজনীতি
  9. সারাদেশ
  10. হ-ব্রেকিং
আজকের সর্বশেষ খবর

যুবদল নেতাকে ডিবি হেফাজতে অমানষিক নির্যাতন

নূরনবী ইসলাম
এপ্রিল ১৮, ২০২৫ ৭:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রস্রাব করার সময় আমাকে বিদ্যুতের শক দেয়। হাতে একটা ইনজেকশন দেয়। ওরা আমার অন্ডোকোষে জোরে জোরে আঘাত করে। বার বার আমার মনে হচ্ছিল আমি মরে যাব।’ এমনই ভয়ংকর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা তানভির তাহের সৌরভ। ২৭ অক্টোবর- ২০২৪ তাকে এমন অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের শিকার সৌরভ বলেন, ‘আমাকে প্রথমে যৌথ বাহিনী আটক করে। তারা আমাকে কোতোয়ালি মডেল থানায় দিয়ে আসে। আমি তখন সুস্থ ছিলাম। পরে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে ডিবি অফিসে  নিয়ে যায়।  ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি মোহাইমেনুর রশিদ আমাকে ডেকে আলাদা করে, ডিবির ৩  কর্মকর্তা ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল। এএসআই মোর্শেদ। তানভির তাহের সৌরভ বলেন, ‘যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, তখন আমি ভেবেছিলাম কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে নেওয়ার পথে গাড়িতে যে টর্চার করা হয়েছে, এর চেয়ে বেশি টর্চার আর হতে পারে না।

আমাকে হয়ত এখন তারা ছেড়ে দেবে না হয় গ্রেপ্তার দেখাবে। কিন্ত এর চেয়ে যে পাশবিক নির্যাতন যে তারা করতে পারে, তা আমার কল্পনায় ছিল না। আমাকে যখন ময়মনসিংহ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়, তখন চোখে কালো কাপড় বেঁধে দেয়। শুরুতে এক চেয়ারে বসিয়ে আমার শরীরের সব কাপড়চোপড় খুলে ফেলে। আমাকে মারছিল আর বারবার এডিশনাল এসপি বলছিল, তোর তথ্য আমরা অনেক দিন থেকে শুনেছি, তুই শরীফ মন্ত্রী এপিএস। তোর কথা আগেই বলেছে। তুই শীর্ষ সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী । শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে বলেছে, তুই ছাত্রদল করিস ঠিক কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় তুই অস্ত্র ডেলিভারী দিতে। 

তারা যেভাবে আমাকে মেরেছিল, আমি ভেবেছিলাম পায়ের অংশ পচে যাবে বা কেটে ফেলতে হবে। আমাকে চিত করিয়ে শুইয়ে বলে তোর এক হাত তো আগে ভেঙেছে, আরেক হাত আমরা ভেঙে দেব। আমার নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত মারধর করে। রুটি যেভাবে বেলে ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমি কান্না করলেই বলত তোকে মেরেই ফেলব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এভাবে মারত। আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বন্দুক তাক করে। গত ২৬ অক্টোবর-২০২৪  তারিখ বিদায় নিয়েছিলাম বাসা থেকে  এই বলে যে, আমি মরে গেলে কেঁদো না। আর বেঁচে থাকলে বিকেলে ফোন দেব। এই ভয়েস রেকর্ডটা তারা শুনিয়ে শুনিয়ে মেরেছে। একপর্যায়ে ওরা আমার হাত-পা দুই দিক করে পা দিয়ে চেপে ধরে।



এডিশনাল এসপি মোহাইমেনুর রশিদ তখন বলে, আমি এত শক্ত কেন? এ তো সন্ত্রাসী, সে সন্ত্রাসী ট্রেনিং নিয়েছে। আমি এটা বলতে পারিনি যে আমি জিম করতাম। আমি অন্তত সন্ত্রাসী  হতে পারি না। আমাকে উলঙ্গ অবস্থায় রেখে দেয়। একটা সময়ে বিকেলে এডিশনাল এসপি মোহাইমেনুর রশিদ  এসে বলে একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন? একে ক্রসফায়ার দিবো। এ কথা তিনি নিজেই আমার দুই হাঁটুতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ওরা ভেঙে ফেলে। জিব্বাতে প্লাস দিয়ে টানে। কানে ক্লিপ  দিয়ে বিদ্যুৎ শক দেয়।  আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমাকে মেরেই ফেলবে। তারপর ময়মনসিংহ ডিবি অফিসের  টয়লেটে ফেলে রাখে। পরে আমার স্ত্রীকে খবর দেয়। সে এসে পানি দেয়। আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পায়। আমার স্ত্রী বারবার বলেছেন,

আমার স্বামীকে আর মারবেন না। তারে প্রাণ ভিক্ষা দেন। ‘কারাগারে নেওয়ার পর আমি অনেক কারারক্ষীকে কান্না করে বলেছি, আমাকে হাসপাতালে নেন। আমাকে হাসপাতালে নেয়নি। তানভির তাহের সৌরভ বলেন, ময়ননসিংহের ডিবি পুলিশ আমাকে বলে, তোকে ক্রসফায়ার দেব। তুই রেডি হয়ে নে। আমার হাতে একটি স্ট্যাম্ম ধরিয়ে দেয় সই করতে। সেখানে লেখা ছিল আমি শরীফ মন্ত্রীর লোক। দেখে আমি সই করিনি। তখন দু’জন ভিডিও করেছে। তারা যে এভাবে মামলা সাজাবে আমি ভাবতেও পারিনি।

ডিবিতে কর্মরত সাবেক এসআই আশরাফুল আলম জানান, আমি সৈরভ কে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। নির্যাতন করেছে কিনা আমি জানি না। আমি ঘটনার সময় ছিলাম না। ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি সহিদুল ইসলাম জানান, সৈরভের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। নির্যাতনের কথাটি সত্য নয়। সে ভাল অভিনেতা। ভাল অভিনয় জানে।

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আতাহার হোসেন চৌধুরী বলেন, ভিডিওটি শুনেছি। অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে মামলা করা হবে।মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট সিতিল রায় বলেন, আমি ভিডিওটা দেখে ঠিক থাকতে পারিনি। আমরা প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তে যাব। সত্যতা পাওয়া গেলে পুলিশ প্রধানের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে।  ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ এম.এম.  মোহাইমেনুর রশিদ জানান, সৌরভ হলো শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহের ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়নের সংবাদ প্রকাশ করায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ময়মনসিংহ ডিবি পুরাতন কার্যালয়ে সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক কে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। তখন এই আইনটি নিয়ে ময়মনসিংহে ব্যাপক আলোচনায় হয়। এবার সাবেক যুবদল নেতা তানভির তাহের সৈরভ কে গত  ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর কোতোয়ালি থানা থেকে নিয়ে ডিবি অফিসে নির্মম নির্যাতন করা হয়। যদিও প্রশাসনিক তদন্তের বাইরে ওই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার সৈরভের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি। নির্যাতনের ঘটনা আলোচিত হলেও বাংলাদেশে ওই রকম হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মৃত্যুর ঘটনাও অনেক ঘটেছে। এপর্যন্ত হেফাজতে মৃত্যুর সাতটি ঘটনার কথা জানিয়েছে  মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক)। ২০২২ সালে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ১৯টি। কিন্তু এইসব নির্যাতনের ঘটনায় কখনো মামলা হয়। আবার কখনো মামলা হয়না। মামলা হলেও তা বিশেষ আইনে না হয়ে সাধারণ আইনে হয়। আর এই কারণেই ২০১৩ সালে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনটি  কার্যকর হওয়ার পর এপর্যন্ত মামলা হয়েছে মাত্র ৩২টি। আর শাস্তি হয়েছে মাত্র একটি মামলায়। ২০১৪ সালে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় জনি নামে এক ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা যান। তার পরিবার এই আইনে মামলা দায়ের করেন। ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালত পল্লবী থানার তখন

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি